প্রবীণদের সমস্যা (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বাংলাদেশে প্রবীণ ব্যক্তি ও নারীর অধিকার | - | NCTB BOOK
99
99

আমাদের সমাজে প্রবীণদের সাধারণত যেসব সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় সেগুলো হলো:

(ক) পারিবারিক: আমাদের দেশে এক সময় পরিবারগুলো ছিল একান্নবর্তী। সে সময় পরিবারে প্রবীণদের এক ধরনের কর্তৃত্ব বা ভূমিকা ছিল। কিন্তু শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও মানুষের অর্থনৈতিক জীবনধারার পরিবর্তনের ফলে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে গিয়ে ছোটো ছোটো পরিবারে পরিণত হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী ও নির্ভরশীল ছেলেমেয়ে নিয়ে গঠিত এই পরিবার ব্যবস্থায় বৃদ্ধ বাবা-মা বা শ্বশুর-শাশুড়ির স্থান থাকছে না। তাঁদের দেখাশুনা বা অসুখ-বিসুখে সেবাযত্নের লোকের অভাব ঘটছে। তাঁদেরকে সঙ্গ দেওয়ার বা তাঁদের সঙ্গে গল্পগুজব করার লোক থাকছে না। ফলে তাঁরা এক ধরনের নিঃসঙ্গ ও বিমর্ষ বোধ করছেন। অনেকক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কর্মজীবী হওয়ায় শিশুদের দেখাশুনা, স্কুলে পৌঁছানো, বাজারঘাট করা ও গৃহস্থালি কাজের দায়িত্বও পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের উপর পড়ে। বৃদ্ধ বয়সে অনেক সময়ই এ সব কাজ করা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়। বৃদ্ধদের অনেক সময় পরিবারের বোঝা হিসেবে গণ্য করা হয়।

(খ) অর্থনৈতিক: নিজস্ব আয়-রোজগারের সুযোগ না থাকায় এবং সঞ্চিত অর্থ ও সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ প্রবীণই অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। তাঁদেরকে সন্তানদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়। নিজের ইচ্ছেমতো তাঁরা কিছুই করতে পারেন না। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের প্রবীণদের দুর্দশা এক্ষেত্রে বেশি হয়। বার্ধক্যে পৌঁছানোর আগেই সংসার চালাতে এবং সন্তানদের লেখাপড়া ও তাদের বিয়ের খরচ জোগাতে গিয়ে অনেকেই প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদী ভাঙনের ফলেও অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে যান। এ অবস্থায় যথেষ্ট রোজগার বা সামর্থ্যের অভাবে ছেলেমেয়েদের পক্ষেও প্রবীণ বাবা-মার ভরণ-পোষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ইচ্ছে থাকলেও তারা ঠিকমতো সেবাযত্ন করতে পারে না।

(গ) শারীরিক : প্রবীণ বয়সে মানুষের শারীরিক শক্তি কমে আসে। নানা রোগব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধে। এ সময় মানুষের একটু বিশ্রাম বা আরামের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক প্রবীণেরই এই আরামটুকু জোটে না। অসুস্থ অবস্থায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধাও তাঁরা পান না। রোগব্যাধিতে ঔষধপথ্য কেনার সামর্থ্য তাঁদের থাকে না।

(ঘ) সামাজিক-সাংস্কৃতিক : এক সময় আমাদের দেশে প্রবীণদের প্রতি যে ধরনের সম্মান দেখানো হতো বা তাদের মতামতকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হতো, আজ আর তা দেখা যায় না। এর পেছনে সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক শিক্ষার অভাব, বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবের প্রসার ইত্যাদি অনেক কারণ কাজ করছে। কোনো কোনো পরিবারে ও সমাজে প্রবীণদের আজ প্রায় গৌণ বিবেচনা করা হয়। তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাঁদের পাশে একটু বসে দুটো কথা শোনার সময়ও যেন কারও নেই। অবসর যাপন বা চিত্তবিনোদনের সুযোগও তাঁদের নেই বললেই চলে।

(ঙ) মনস্তাত্ত্বিক: পরিবারে ও সমাজে প্রবীণদের কোণঠাসা অবস্থা তাঁদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতার জন্ম দেয়। তাঁরা নিজেদেরকে খুব অবহেলিত ও অসহায় ভাবতে শুরু করেন। সামর্থ্যের অভাব এবং সেই সঙ্গে শারীরিক অসুস্থতা ও নিঃসঙ্গতা এই হীনমন্যতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রবীণ বয়সের স্মৃতিবিভ্রমও এক্ষেত্রে বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি করে।

কাজ- ১: প্রবীণদের সমস্যাগুলো উল্লেখ কর।
কাজ- ২: তোমার পরিচিত কোনো প্রবীণ ব্যক্তি যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন তার বিবরণ দাও।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion